রুকু ও সেজদা

গুরুভক্ত ব্যক্তিকে সর্বদা রুকু ও সেজদা অবস্থায় দেখা যাইবে। রুকু অর্থ মন-মানসিকতার সমর্পিত অবস্থা আর সেজদা অর্থ পরিপূর্ণ সমর্পিত অবস্থা, যাহার মধ্যে মানবীয় অনুভূতির পরিপূর্ণ বিলোপ ঘটিয়া থাকে, তথা ফানাফিল্লা অবস্থা। সংসারধর্ম পালনকালে তাহাদের রুকু অবস্থা এবং সালাতের ধ্যান পালনকালে সেজদা অবস্থা হয়। সাধকের এই দুইটি অবস্থা একটি অন্যটির পরিপূরক...
রুকুকারী = আমিত্বের অহংকার প্রকাশে বিরত হইয়া যাহার মন আপন রব দিকে সর্বক্ষণ প্রণত বা বিনত হইয়া থাকে তিনি রুকুকারী। রবের অহংকারই তাহার একমাত্র অহংকার। প্রবৃত্তির ইচ্ছার নিকট নত না হইয়া যিনি আপন রবের ইচ্ছার নিকট নত হইয়া থাকেন তিনি রুকুকারী। আনুষ্ঠানিক সালাতের 'রুকু' উহা অর্জনের জন্য একটি মহড়া মাত্র।
সেজদাকারী = সেজদা আসলে ফানাফিল্লার অবস্থা, অর্থাৎ নির্বান অবস্থা। সম্পূর্ণরূপে বস্তু নিরপেক্ষ একটি মানসিক সমর্পিত হাল। এই অবস্থায় মানুষের মানবীয় চেতনার পরিপূর্ণ বিলোপ সাধন হয়। এইজন্য সেজদা অবস্থায় দেহ হতচেতন বা অবচেতন থাকে। অর্থাৎ দেহের চেতনা হইতে মন সরিয়া যাইবার শক্তি অর্জন করে। আপন রবের পরিচয়ের সংযোগে আসিলে সাধক-নফস বস্তুজগতের চেতনা হইতে তথা আপন দেহের ঘনিষ্ঠ সংযোগ হইতে ছুটিয়া যায়। সুতরাং তাহার দেহ হইতে নফস হতচেতন থাকে--ইহাই প্রকৃত সেজদা। সেজদার হালে প্রকৃত চেতনা ও জ্ঞানলোকে চলিয়া যায়। সেজদাকারী ব্যক্তির মনে কলুষিত আমিত্বের অবসান ঘটিয়াছে। আনুষ্ঠানিক সেজদা অবশ্য উহারই একটি মহড়া।
মাথা নোয়াইয়া আনুষ্ঠানিক সেজদার করিবার বিষয়টি কোরানে সেজদারূপে আখ্যায়িত হয় নাই। ইহা হইল কোরানের উল্লিখিত প্রকৃত সেজদায় পৌঁছিবার প্রয়োজনীয় প্রারম্ভিক পর্যায়।
-- সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী; কোরানদর্শন

Comments

Popular Posts